বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য তুরস্কের সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট (বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব) প্রোগ্রামটি শুধু যে সেকেন্ড পাসপোর্ট পাবার একটি উপায় তা নয়, বরং এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণের সুবিধা, তুরস্কের রিয়েল এস্টেট থেকে আকর্ষণীয় ইনকাম ছাড়াও আরো অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।
আর এসব কারণেই ২০২৫ সালে বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকার শুরুর দিকে উঠে এসেছে তুরস্কের পাসপোর্ট। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন, ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারেন এবং তাদের পরিবারের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের ব্যবস্থা করতে পারেন।
আজকের বিস্তারিত গাইড থেকে আপনি জানতে পারবেন তুরস্কের নাগরিকত্ব বাংলাদেশীদের জন্য কী কী সুবিধা দেয় এবং কিভাবে আপনি বাংলাদেশে থেকেই তুরস্কের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
কেন বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীরা তুরস্কে বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব চায়?
একদম শুরু থেকেই টার্কিশ সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামে সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। এর মূল কারণ হল এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে দ্রুত, সরাসরি এবং নির্ভরযোগ্য উপায়ে সেকেন্ড সিটিজেনশিপ বা দ্বিতীয় নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। আসুন দেখে নেই এই প্রোগ্রামের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো।
- ন্যূনতম বিনিয়োগের পরিমাণ কম: বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাবার সুযোগ থাকলেও সেসব প্রোগ্রামের তুলনায় তুরস্কে ন্যূনতম বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কম। এটি বিশেষ করে বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে থাকে।
- দ্রুত এবং সহজ প্রক্রিয়া: অন্যান্য অনেক দেশের মত তুরস্কে নাগরিকত্ব পাবার জন্য বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করতে হয় না। আবেদনকারীরা সাধারণত কয়েক মাসের মধ্যেই তুরস্কের নাগরিকত্ব পেয়ে থাকেন। আর এই দ্রুত প্রক্রিয়ার কারণেই প্রোগ্রামটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
- পরিবারসহ নাগরিকত্ব পাবার সুযোগ: বেশিরভাগ দেশেই শুধুমাত্র বিনিয়োগকারীরা ব্যক্তিগতভাবে নাগরিকত্ব পেলেও তুরস্কে বিনিয়োগকারীরা তাদের স্বামী/স্ত্রী এবং ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তানদের জন্যও নাগরিকত্ব পেয়ে থাকেন। এ কারণে তুরস্কের সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামটি বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
- বসবাসের বাধ্যবাধকতা নেই: অনেক দেশেই নাগরিকত্ব পাবার জন্য সে দেশে একটি নির্দিষ্ট সময় বসবাস করতে হয়। কিন্তু তুরস্কে বিনিয়োগকারীদের জন্য এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বিনিয়োগকারীরা তুরস্কে স্থায়ীভাবে বসবাস না করেই নাগরিকত্ব পেতে পারেন।
কেন নেবেন তুরস্কের নাগরিকত্ব?
বাংলাদেশী নাগরিক এবং তাদের পরিবারের জন্য তুরস্ক যে শুধুমাত্র একটি বিনিয়োগের জায়গা তা নয়, বরং এর রয়েছে বহুমাত্রিক সুবিধা। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
- শক্তিশালী অর্থনীতি: তুরস্ক জি২০ এর সদস্য এবং এর অর্থনীতি বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি। আর এই শক্তিশালী অর্থনীতির পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ম্যানুফ্যাকচারিং, ট্যুরিজম এবং রিয়েল এস্টেটসহ বেশ কিছু সেক্টরের। আর তুরস্কের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এটি ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বাজারগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এবং ট্রানজিট হাব হিসেবে কাজ করে।
- সাংস্কৃতিক সংযোগ: তুরস্ক এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিকভাবে অনেক ধরনের সংযোগ আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, তুরস্ক এবং বাংলাদেশ উভয়ই মুসলিমপ্রধান দেশ। এই দুই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ইসলাম হওয়ায় দেশ দুটির সামাজিক রীতিনীতি এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যে অনেক মিল দেখা যায়। এ কারণে বাংলাদেশী নাগরিকরা তুরস্কে গিয়ে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
- উন্নত জীবনমান: বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে যে ধরনের উন্নত জীবনযাত্রা দেখে আমরা আকৃষ্ট হই, তুরস্কে সেই একই ধরনের জীবনযাপন আরো কম খরচে করা সম্ভব। তুরস্কের বিভিন্ন শহরে আধুনিক অবকাঠামো, উন্নত মানের চিকিৎসা এবং শিক্ষার সুযোগ রয়েছে।
- বৈশ্বিক যোগাযোগ: তুরস্কে রয়েছে বিশ্বমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট, উন্নত সড়ক ব্যবস্থা, আধুনিক মেট্রো সুবিধা ইত্যাদি থাকার কারণে তুরস্কের ভেতরে এবং বাইরে খুব সহজেই যাতায়াত করা যায়।
তুরস্কের নাগরিকত্ব পাবার উপায়সমূহ
যদিও তুরস্কের নাগরিকত্ব পাবার বিভিন্ন উপায় আছে, বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়াটাই সবচেয়ে সহজ এবং দ্রুত উপায়। এবার আসুন নাগরিকত্ব পাবার বিভিন্ন উপায়ের তুলনা করা যাক।
উপায় | কী লাগে? | সময়সীমা | কাদের জন্য উপযুক্ত? |
সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট | আর্থিক বিনিয়োগ | ৬-৯ মাস | সম্পদশালী ব্যক্তি এবং পরিবার যারা দ্রুত এবং সহজে তুরস্কের পাসপোর্ট পেতে চান |
সিটিজেনশিপ বাই ম্যারেজ | স্বামী/স্ত্রী তুরস্কের নাগরিক হতে হবে এবং তাদের সাথে অন্তত তিন বছরের বৈবাহিক সম্পর্ক থাকতে হবে | নির্দিষ্ট নয়; বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লম্বা সময়ের প্রয়োজন হয় | যারা ইতোমধ্যে তুরস্কের কোনো নাগরিকের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন |
সিটিজেনশিপ বাই ন্যাচারালাইজেশন | তুরস্কে কমপক্ষে পাঁচ বছর যাবত একটানা বসবাস করতে হয় | দীর্ঘমেয়াদী এবং জটিল প্রক্রিয়া | যারা ইতোমধ্যে তুরস্কে লম্বা সময়ের জন্য বসবাস করেছেন এবং কাজ করেছেন |
যারা দীর্ঘ মেয়াদে তুরস্কে বসবাস করা বা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ছাড়াই সহজে দ্বিতীয় নাগরিকত্ব পেতে চান, তাদের জন্য সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামটিই সবচেয়ে উপযুক্ত।
টার্কিশ সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট এর বিভিন্ন ধরনসমূহ
এই প্রোগ্রামের সবচেয়ে জনপ্রিয় অপশন হচ্ছে রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ। এছাড়া আরো বেশ কিছু খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। নিচে থাকছে এসব খাতে ন্যূনতম বিনিয়োগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা।
বিনিয়োগের ধরন | ন্যূনতম বিনিয়োগ | বিনিয়োগের সময়সীমা |
রিয়েল এস্টেট | ৪,০০,০০০ ইউএস ডলার | ৩ বছর |
ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট | ৫,০০,০০০ ইউএস ডলার | ৩ বছর |
সরকারী বন্ড/ফান্ড | ৫,০০,০০০ ইউএস ডলার | ৩ বছর |
বিনিয়োগের মাধ্যমে টার্কিশ সিটিজেনশিপ পাবার বিস্তারিত
তুরস্কের নাগরিকত্ব পেতে চাইলে একজন বিনিয়োগকারী রিয়েল এস্টেটসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে বিনিয়োগের ভালো মুনাফা পাবার দিক থেকে রিয়েল এস্টেট খাত অত্যন্ত উপযোগী। এই খাতে বিনিয়োগ করলে নাগরিকত্ব পাবার পাশাপাশি একজন বিনিয়োগকারী স্থাবর সম্পত্তিরও মালিক হতে পারেন। এবার আমরা জানব বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য।
- বিনিয়োগের পরিমাণ এবং ধরন: তুরস্কের নাগরিকত্ব পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই কমপক্ষে ৪,০০,০০০ ইউএস ডলার মূল্যের রিয়েল এস্টেট কিনতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি একটি প্রোপার্টিও কিনতে পারেন, আবার চাইলে একাধিক প্রোপার্টিও কিনতে পারেন। আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক ভবন এবং জমি এই ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত।
- প্রধান পূর্বশর্ত: রিয়েল এস্টেট কেনার পর কমপক্ষে তিন বছর পার না হলে আপনি এই সম্পত্তি বিক্রি করতে পারবেন না। প্রোপার্টি কেনার সময়ই আপনাকে এ ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।
- বিনিয়োগের সুবিধা: তুরস্কের পাসপোর্ট পাওয়া ছাড়াও আপনি রিয়েল এস্টেট প্রোপার্টি ভাড়া দিয়ে আয় করতে পারবেন। তিন বছর পার হলে আপনি চাইলে প্রোপার্টি বিক্রিও করে দিতে পারবেন, সেক্ষেত্রে আপনি বিনিয়োগ তুলে আনার পরও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। তুরস্কের রিয়েল এস্টেট খাত দ্রুত বড় হচ্ছে, বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে। কাজেই আপনার প্রোপার্টি ভবিষ্যতে বিক্রি করলে ভালো পরিমাণে লাভ করতে পারবেন।
ক্যাপিটাল এবং বন্ড ইনভেস্টমেন্ট
যারা অস্থাবর সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য অন্য অপশগুলোও বেশ লাভজনক। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার একটি টার্কিশ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
- ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট: এক্ষেত্রে আপনাকে কমপক্ষে ৫,০০,০০০ ইউএস ডলারের সমপরিমাণ টার্কিশ লিরা একটি টার্কিশ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে হবে। এই টাকা তিন বছরের আগে অ্যাকাউন্ট থেকে উত্তোলন করা যাবে না।
- সরকারী বন্ড: আপনি চাইলে সরকারী বন্ড কিনেও তুরস্কের নাগরিকত্ব পেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে কমপক্ষে ৫,০০,০০০ ইউএস ডলার মূল্যের সরকারী বন্ড কিনতে হবে। ক্রয়কৃত বন্ড আপনি তিন বছরের আগে বিক্রি করতে পারবেন না।
- ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড: তুরস্কের যেকোনো লাইসেন্সকৃত ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডে বিনিয়োগ করেও নাগরিকত্ব পাওয়া এবং পরোক্ষভাবে আয় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আপনাকে কমপক্ষে ৫,০০,০০০ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।
বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য তুরস্কের নাগরিকত্ব পাবার স্টেপ-বাই-স্টেপ আবেদন পদ্ধতি
বিনিয়োগকারীরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে নাগরিকত্ব পান, সেজন্য তুরস্ক সরকার আবেদন প্রক্রিয়াকে সহজ কিছু ধাপে ভাগ করেছে। এবার জেনে নিন আবেদন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত।
১. প্রাথমিক কনসালটেশন এবং ব্যাকগ্রাউন্ড চেক:
- যা করতে হবে: প্রথমেই আপনাকে একটি বিশেষায়িত কনসালটেন্সি ফার্মের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
- উদ্দেশ্য: সাধারণত বিশেষায়িত কনসালটেন্সি ফার্মগুলো টার্কিশ সিটিজেনশেপ পাবার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হয়ে থাকে। তারা আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে আপনাকে উপযুক্ত বিনিয়োগের অপশন বাছাই করতে সাহায্য করবে।
২. আপনার বিনিয়োগ সম্পন্ন করা:
- যা করতে হবে: বিনিয়োগের যে অপশনটি আপনি বাছাই করছেন, সেই অপশনের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ তুরস্কের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
- টিপস: রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সরকার-অনুমোদিত ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে।
৩. রেসিডেন্স পারমিট গ্রহণ করা:
- যা করতে হবে: বিনিয়োগ সম্পন্ন হবার পর আপনাকে অবশ্যই একটি স্বল্পমেয়াদী রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে।
- কেন প্রয়োজন: তুরস্কের নাগরিকত্বের আবেদন করতে হলে আপনার অবশ্যই রেসিডেন্স পারমিট থাকতে হবে। এই পারমিট ছাড়া আপনি বৈধভাবে তুরস্কে বসবাস করতে বা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন না।
৪. নাগরিকত্বের আবেদন জমা দেয়া:
- যা করতে হবে: আপনি যে কনসালটেন্সি ফার্মের সাথে কাজ করবেন, তাদের লিগ্যাল টীম আপনার সব প্রয়োজনীয় দলিলপত্র যোগাড় করতে সাহায্য করবে এবং আপনার হয়ে টার্কিশ সিটিজেনশিপের আবেদন জমা দেবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: এই আবেদনের জন্য আপনার পাসপোর্টের কপি, বায়োমেট্রিক ছবি, জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং বিনিয়োগের প্রমাণপত্র প্রয়োজন হতে পারে।
৫. নাগরিকত্বের অনুমতি পাওয়া:
- যা করতে হবে: এই ধাপে আপনাকে তেমন কিছুই করতে হবে না। তুরস্ক সরকার আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করার পর সন্তোষজনক ফলাফল পেলে আপনার নাগরিকত্বের আবেদন মঞ্জুর করবে।
- সময়সীমা: এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে তিন থেকে ছয় মাসের মত সময় লাগে। নাগরিকত্বের আবেদন মঞ্জুর হবার পর আপনার নামে একটি নাগরিকত্বের সনদ ইস্যু করা হবে।
৬. তুরস্কের পাসপোর্ট পাওয়া:
- যা করতে হবে: নাগরিকত্ব সনদ পাবার পর আপনি তুরস্কের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট পাবার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এটিই পাসপোর্ট পাবার জন্য শেষ ধাপ এবং খুব দ্রুতই আপনি একজন টার্কিশ নাগরিকের পূর্ণ সুযোগসুবিধা এবং অধিকার প্রাপ্য হবেন।
দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে কিছু কথা
অনেকেই ভাবেন তুরস্কের নাগরিকত্ব পেতে হলে হয়ত বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু একটি ভালো ব্যাপার হচ্ছে তুরস্ক ও বাংলাদেশ উভয় দেশই দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি দেয়।
তুরস্কের দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন
- তুরস্কের আইনে স্পষ্টভাবেই দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করা হয়েছে।
- তুরস্কের নাগরিক হতে হলে আপনাকে বাংলাদেশী পাসপোর্ট ত্যাগ করতে হবে না। অন্যান্য অনেক দেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাবার ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন
- বাংলাদেশের আইনেও দ্বৈত নাগরিকত্বের বিধান রয়েছে।
- কোনো বাংলাদেশী নাগরিক যদি অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে তাকে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। এই সনদ থাকলে বাংলাদেশী নাগরিকত্বের সুবিধা ভোগ করতে বা পাসপোর্ট নবায়ন করতে কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হবে না।
কিভাবে আইনী ঝামেলা থেকে বাঁচবেন?
- যেহেতু নাগরিকত্বের আবেদন প্রক্রিয়াটি সাধারণত একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এজন্য উভয় দেশের নাগরিকত্ব সম্পর্কে সম্যক আইনী ধারণা থাকা দরকার, আপনার উচিত হবে এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেয়া। বাংলাদেশ থেকে তুরস্কের নাগরিকত্ব পাওয়ার ব্যাপারে যারা কাজ করছে, তাদের মধ্যে eduaid Immigration Services অন্যতম দক্ষ এবং অভিজ্ঞ একটি কনসালটেন্সি ফার্ম।
- পুরো প্রক্রিয়ায় আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সব প্রয়োজনীয় আবেদন সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়ে উভয় দেশের সরকারী কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হয়। এতে আপনি ভবিষ্যতে যেকোনো আইনী ঝামেলা সহজে এড়াতে পারবেন।
বাংলাদেশী পরিবারের জন্য টার্কিশ সিটিজেনশিপের মূল সুবিধা
সুবিধা | বিস্তারিত |
সহজে বিশ্ব ভ্রমণ | তুরস্কের পাসপোর্ট থাকলে আপনি পৃথিবীর ১২০টির বেশি দেশে ভিসা ছাড়া অথবা অন-অ্যারাইভাল ভিসায় ভ্রমণ করতে পারবেন। বাংলাদেশী পাসপোর্টের তুলনায় এই সুবিধা অনেক বেশি। |
যুক্তরাষ্ট্রের ই-২ ইনভেস্টর ভিসা | তুরস্কের নাগরিক হলে আপনি যুক্তরাষ্ট্রের ই-২ ইনভেস্টর ভিসার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন। এই ভিসা পেলে আপনি পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস, কাজ এবং ব্যবসা করতে পারবেন। |
নিরাপদ ভবিষ্যত | বিশ্বের বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তুরস্ক অত্যন্ত স্থিতিশীল এবং নিরাপদ একটি দেশ। কাজেই আপনার পরিবারের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যত গড়ার জন্য এটি উপযুক্ত। |
উন্নতমানের সেবা | তুরস্কের রয়েছে আধুনিক চিকিৎসা এবং বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা। এখানে আপনি পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় কম খরচে ভালোমানের মেডিকেল সেবা এবং শিক্ষা পাবেন। |
বিনিয়োগের রিটার্ন | তুরস্কে রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ করলে একদিকে আপনি যেমন ভাড়া থেকে আয় করতে পারবেন, তেমনি সময়ের সাথে সাথে সম্পদের দামও বাড়বে। তিন বছর পর আপনি আপনার প্রোপার্টি বিক্রি করে বেশ ভালো পরিমাণের লাভ করতে পারবেন। |
বসবাসের বাধ্যবাধকতা নেই | এই প্রোগ্রামে আপনাকে স্থায়ীভাবে তুরস্কে বসবাস করতে হবে না, কোনো ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট দিতে হবে না, এমনকি কোনো ইন্টারভিউও দিতে হবে না। আপনার ব্যস্ত জীবনে সহজেই আপনি নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। |
বাংলাদেশী আবেদনকারীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
দ্বিতীয় নাগরিকত্ব পাবার প্রক্রিয়া নিয়ে আপনার মনে থাকতে পারে অনেক প্রশ্ন। আমরা এখানে সবচেয়ে বেশিবার জিগেস করা হয় এমন কিছু প্রশ্ন বাছাই করে সেগুলোর উত্তর দিচ্ছি।
১. একজন বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী ব্যক্তি কি টার্কিশ সিটিজেনশিপের জন্য যোগ্য?
অবশ্যই। বাংলাদেশসহ যেকোনো দেশের পাসপোর্টধারী ব্যক্তিই তুরস্কের নাগরিকত্ব পাবার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে।
২. তুরস্কের নাগরিকত্ব পেতে ন্যূনতম কত বিনিয়োগ করতে হয়?
রিয়েল এস্টেট খাতে ন্যূনতম বিনিয়োগের পরিমাণ ৪,০০,০০০ ইউএস ডলার এবং ব্যাংক ডিপোজিট, সরকারী বন্ড বা ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডে বিনিয়োগের ন্যূনতম পরিমাণ ৫,০০,০০০ ইউএস ডলার।
৩. নাগরিকত্ব পেতে হলে আমাকে কি তুরস্কে বসবাস করতে হবে?
না, তুরস্কের নাগরিকত্ব পেতে হলে বসবাসের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
৪. আমাকে কি তুরস্কের ভাষা শিখতে হবে বা পরীক্ষা দিতে হবে?
না। তুরস্কের নাগরিকত্ব পাবার জন্য ভাষা শেখা বা পরীক্ষা দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
৫. আমি কি আবেদনে আমার পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারব?
অবশ্যই। মূল আবেদনকারী একই আবেদনপত্রে তার স্বামী/স্ত্রী এবং ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন।
৬. তুরস্কের পাসপোর্ট পেতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কত সময় লাগে?
বিনিয়োগ করা থেকে শুরু করে তুরস্কের পাসপোর্ট পেতে সাধারণত ৬ থেকে ৯ মাস সময় লাগে।
৭. আমি কি আমার বাংলাদেশী পাসপোর্টও রাখতে পারব?
অবশ্যই। তুরস্ক এবং বাংলাদেশ উভয়ই দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে। আপনি বাংলাদেশী নাগরিকত্ব ত্যাগ না করেই তুরস্কের নাগরিক হতে পারবেন।
৮. নাগরিকত্ব পাবার পর আমার বিনিয়োগের কী হবে?
তিন বছর পরে আপনি আপনার বিনিয়োগ বিক্রি করে দিতে পারবেন। রিয়েল এস্টেটের ক্ষেত্রে আপনি সম্পদ বিক্রি করে আপনার বিনিয়োগকৃত মূলধন তুলে আনতে পারবেন এবং লাভও করতে পারবেন।
৯. যুক্তরাষ্ট্রের ই-২ ইনভেস্টর ভিসা কিভাবে পাবো?
তুরস্কের নাগরিকত্ব পাবার পর আপনি যুক্তরাষ্ট্রের ই-২ ইনভেস্টর ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
১০. তুরস্কে রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ করলে কেমন রিটার্ন পাওয়া যায়?
তুরস্কের রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ করলে আপনি দু’ধরনের লাভ পাবেন। প্রথমটি হল সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি, যেটা বড় শহরগুলোতে বার্ষিক ২০% এর ওপরে হয়ে থাকে। আরেকটি হল দীর্ঘমেয়াদে ভাড়ার মাধ্যমে আয়, যেটি ইস্তানবুল বা অন্যান্য বড় শহরগুলোতে ৫-৭% হয়ে থাকে।
টার্কিশ সিটিজেনশিপ নিয়ে আপনার পরিবারের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যত গড়তে চান?
এডুএইড বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব পাওয়া, বিনিয়োগের সর্বোচ্চ রিটার্ন পাওয়া এবং দ্বিতীয় পাসপোর্ট পাওয়ার ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকে।